, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

admin admin

পাকিস্তান কি আবারো সেনা শাসনের দিকে যাচ্ছে?

প্রকাশ: ২০২৩-০৫-১৩ ১৭:০৬:০৫ || আপডেট: ২০২৩-০৫-১৩ ১৭:০৬:০৮

Spread the love

আরটিএম নিউজ: ০৯ মে অন্ধকার দিবস!আখ্যা দিয়ে
পাক আইএসপিআর এর বক্তব্যে যা আছে:
“৭৫ বছরে শত্রুরা যা পারেনি, এই দলটি তাই করেছে: পাক সেনাবাহিনী”

“পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক রাওয়ালপিন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন।

৭৫ বছরে শত্রুরা যা করতে পারেনি, আন্দোলন-বিক্ষোভের নামে একটি দলের বিক্ষোভকারীরা সেটিই করেছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে ০৯ মে ২০২৩ তারিখকে পাকিস্তানের ইতিহাসে ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবেও অভিহিত করেছে তারা।

মূলত ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর তার সমর্থকরা রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সেনা সদর দপ্তর এবং লাহোরে সেনাবাহিনীর কর্পস কমান্ডারের বাসভবনে হামলা চালায়। আর সেটি নিয়েই এই বক্তব্য সামনে আনলো দেশটির সামরিক বাহিনী। বৃহস্পতিবার (১১ মে ২০২৩) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর স্থাপনা এবং সম্পত্তিতে আক্রমণ করার কারণে ০৯ মে তারিখকে দেশের ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসাবে স্মরণ করা হবে বলে বুধবার জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের গ্রেপ্তারের জেরে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে এবং টানা দ্বিতীয় দিনের সহিংসতার সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর এই বিবৃতিটি সামনে এলো।

বিক্ষোভ-সহিংসতার ফলে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন এবং পেশোয়ার, কোয়েটা, লাহোরে বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগের কয়েক ডজন ঘটনায় সারা দেশে একাধিক রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রেডিও পাকিস্তান ভবন এবং পেশোয়ারে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের অফিসও রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বুধবার জানায়, পিটিআই চেয়ারম্যানের গ্রেপ্তারের পরে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সামরিক স্থাপনা ও সম্পত্তিতে আক্রমণ করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী বিরোধী স্লোগান তোলা হয়েছে। আর এই কারণে ০৯ মে তারিখকে দেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসাবে স্মরণ করা হবে।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাসদস্যরা একদল দুর্বৃত্তের সহিংস কর্মকাণ্ডে ধৈর্য, ​​সহনশীলতা ও সংযম প্রদর্শন করেছে। বিবৃতির ভাষায়, ‘বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সৈন্যরা তাদের চারিত্রিক গুণের তোয়াক্কা না করে চরম ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছেন।’

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং উল্লেখ করেছে, ‘ঘৃণ্য এই পরিকল্পনার অধীনে সেনাবাহিনীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জঘন্য প্রচেষ্টা করা হয়েছিল, যা ঘৃণ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সেনাবাহিনীর পরিপক্ক প্রতিক্রিয়া সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেয়।’

আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ভালো করেই জানি, এর পেছনে কিছু অশুভ দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ, নির্দেশনা এবং সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পনা ছিল।’

এতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের সাহায্যকারী, পরিকল্পনাকারী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা এবং সম্পত্তিসহ সেনাবাহিনীর ওপর আরও কোনও আক্রমণ হলে কঠোরভাবে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। আর এর দায়ভার সেই দলটির ওপরই বর্তাবে যারা পাকিস্তানকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চায় এবং তারা এটি একাধিকবার প্রকাশ করেছে।’

সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং বলেছে, ‘কাউকে মানুষকে উসকানি দিতে এবং আইন হাতে তুলে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না।’

আইএসপিআর বলেছে, একদিকে এই দুর্বৃত্তরা তাদের সীমিত ও স্বার্থপর উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জাতির আবেগকে জাগিয়ে তুলছে, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর গুরুত্ব তুলে ধরে জনগণকে প্রতারিত করছে। এটা ভন্ডামির উদাহরণ।’

এতে আরও বলা হয়েছে, গত ৭৫ বছরে শত্রুরা যা করতে পারেনি ‘রাজনৈতিক পোশাক পরা এই দলটি ক্ষমতার লালসায়’ সেটিই করেছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) ওয়ারেন্টে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাকে গ্রেপ্তার করে।

পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার এই পদক্ষেপে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শেহবাজ শরিফের সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান এবং ইসলামাবাদসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে ডেকেছে।

বিক্ষোভ-সহিংসতায় এখন পর্যন্ত আটজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিক্ষোভ দমাতে পাকিস্তানের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে এবং এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় এক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
সূত্র: The News International/ Dhakapost

নোট: ০৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য গিয়েছিলেন ইমরান খান। এ সময় তাঁকে আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইমরানকে গ্রেপ্তার করতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০০ সদস্য ছিলেন।
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৮ জন নিহত ও ২৯০ জন আহত হয়েছেন। আটক হয়েছেন ১ হাজার ৯০০ বিক্ষোভকারী।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়া ও ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাসভবনে হামলা এবং রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাসদর দপ্তরের ফটক ভাঙচুর করার পর সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া হয়। উৎস: প্রথম আলো।ম

Logo-orginal