, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

admin admin

দুই মেরুকরণ রাজনীতিতে” গুজব না সত্য।

প্রকাশ: ২০২৩-০৬-০৯ ১২:১৭:৫০ || আপডেট: ২০২৩-০৬-০৯ ১২:১৭:৫৫

Spread the love

(মানবজমিন ডেস্ক:)
মাস তিনেক হলো খোরশেদ নিখোঁজ। কাওরান বাজারে তার চায়ের দোকান ঘিরে সাংবাদিক আড্ডা দীর্ঘদিনের। রুবেল-সোহাগের দোকানেও একই দৃশ্য। বিকাল থেকে রাত। উজির-নাজির মারতে থাকেন সাংবাদিকরা। খবর আর গুজব নিয়ে চলে আলোচনা। তো সেখানে এখন ইস্যু কী? আলোচনাটা ঠিক আচমকা শুরু হয়েছে তা বলা যায় না। পর্দার আড়ালে এ নিয়ে কথা চলছে মাস কয়েক ধরেই। এমনকি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ যখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান তখনো তৈরি হয়েছিল নানা গুঞ্জন। সহসাই তিনি মুক্তি পেতে পারেন এ আলোচনা এখন জোরদার।

রাজনীতির নানা হিসাব কাজ করছে এর নেপথ্যে। এ ব্যাপারে পশ্চিমা শক্তির বাইরে একটি দেশের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা রয়েছে। কীভাবে তার মুক্তি মিলতে পারে? বৃহস্পতিবার বেগম জিয়ার এক আইনজীবীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম? তিনি বললেন, দুটি পথ খোলা রয়েছে। একটি অপেক্ষাকৃত সহজ। খালেদা জিয়ার মুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী আদেশে দুটি শর্ত রয়েছে। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না। এ দুটি শর্ত প্রত্যাহার করলেই তিনি পুরোপুরি মুক্তি পেতে পারেন। আরেকটি হতে পারে আদালত থেকে জামিন মঞ্জুর। ৭৫ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন তিন বছর ধরে ‘ফিরোজা’র বাসিন্দা। এসময় কয়েক দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে কোথাও যাননি। প্রকাশ্যে কোনো ব্যাপারেই মন্তব্য করেননি। বিএনপি নেতারাও তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন কদাচিৎ। সম্প্রতি একটি দলের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি বিএনপি’র বর্তমান নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
এমনিতে রাজনীতিতে একধরনের রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর পরিস্থিতি বদলাচ্ছে নানাদিকে। নানামুখী প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সম্ভবত তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গেল কয়েকদিনে তার সাথে বৈঠক হয়েছে বড় তিনটি দলের নেতাদের সঙ্গে। এর বাইরে তিনি কথা বলেছেন নানা পেশার মানুষের সঙ্গে। সবার কথা শুনে আপাত ক’দিনের জন্য গেছেন ওয়াশিংটন। এরইমধ্যে আলোচনায় এসেছে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা কিংবা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন। একাধিক সূত্র বলছে, জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর সায় রয়েছে। তবে সেটি ঠিক কী ফরম্যাটে হতে পারে তা পরিষ্কার নয়। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ অতীতে সফল হয়নি। এবার অনেকটা হঠাৎ করেই বিষয়টি সামনে এনেছেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু। পরদিনই অবশ্য তিনি ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। নানামুখী কথা শোনা গেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য বলছেন, আন্দোলন ডাইভার্ট করতে সংলাপ ইস্যু সামনে আনা হয়েছে। সে যাই হোক, সামনের দিনগুলোতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতার ইস্যু যে আরও আসবে তা এখনই হলফ করে বলে দেয়া যায়। এ ছাড়া, বিকল্প কী আছে? বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিকল্পই বা কী? জাতীয় সরকার?

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও সম্প্রতি রাজনীতিতে আলোচনায় রয়েছেন। তার একটি বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি করে। তিনি অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ ভোট ছাড়া আসন ভাগাভাগির ছক কষছে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে কথা আছে, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিভিন্ন নামে কিছু সিট দেবে। আমাদেরও (জাপা) কিছু সিট দেবে। আমাদের বলা হয়, আপনারা আরও সংগঠিত হন, আরও বেশি সিট দেবো।’ এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকেও রাজনৈতিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। সে সময় জোট রাজনীতির বিষয়েও তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন বলে জানা যায়। তবে একটি সূত্র বলছে, নানা মহলের সঙ্গে দেশ-বিদেশে কথা হচ্ছে জিএম কাদেরের। জাতীয় পার্টি যখন রাজনীতিতে কৌতূহল তৈরি করেছে তখন দীর্ঘদিন পর মাঠে নামার চেষ্টা করছে জামায়াত। এক দফায় এরইমধ্যে দলটির বিক্ষোভের আবেদন নাকচ করেছে পুলিশ। আবেদন করা হয়েছে নতুন করে। দেখার বিষয় শনিবার কী ঘটে?

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা নিয়েই আলোচনা বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। অনেকটা ব্যতিক্রমভাবে কয়েক মাস ধরে সক্রিয় রয়েছে জাপান দূতাবাসও। চীন ও রাশিয়া নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারতের ভূমিকার দিকেই সবার চোখ। তা হয়তো দৃশ্যমান হওয়ার পথে।

এটা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। গুজবের জন্য এখন আর কান পাততে হয় না। প্রত্যেকের মোবাইলে মোবাইলে নানা তথ্য। কোনটি খবর, কোনটি গুজব ঠাওর করা দায়। তবে রাজনীতির চাকা ঘুরছে খুব দ্রুত। ছয়-সাত মাস প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ।
সুত্রঃ দৈনিক মানবজমিন।

Logo-orginal