, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

admin admin

মার্কিন দুতাবাসে আমন্ত্রণ পেল জামায়াত, সমাবেশ করবে ছয় বড় শহরে।

প্রকাশ: ২০২৩-০৬-২৮ ১৮:৩৩:২৭ || আপডেট: ২০২৩-০৬-২৮ ১৮:৩৩:৩৩

Spread the love

ঢাকাঃ ফের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী, এবার মার্কিন দুতাবাসের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে আবারো আলোচনায় এসেছে।
এইদিকে সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এক যুগ আড়ালে থাকা জামায়াতে ইসলামী মূলধারার রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে। মার্কিন ভিসা নীতি কাজে লাগিয়ে ঈদের পর ছয় বড় শহরে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। প্রথমে কুমিল্লায় সমাবেশের অনুমতি চাইবে। কূটনীতিকদের সঙ্গেও সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা রয়েছে দলের পক্ষ থেকে। জামায়াত এক দশক পর মার্কিন দূতাবাসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণও পেয়েছে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোণঠাসা জামায়াত ২০১১ সাল থেকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই। ২০১৫ সালের হরতাল-অবরোধের পর কোনো ঘোষণা ছাড়াই ঝটিকা মিছিল-সমাবেশে সীমাবদ্ধ ছিল দলটির তৎপরতা। পুলিশের অনুমতি নিয়ে এক দশক পর গত ১০ জুন রাজধানীতে সমাবেশ করে রাজনীতিতে নতুন আলোচনা তৈরি করে দলটি। আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারিয়েছে জামায়াত।

গত সপ্তাহে জামায়াতের মজলিশে শূরা দলের সাংগঠনিক বিভাগগুলোতে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সমাবেশে বড় জমায়েত ঘটিয়ে শক্তির জানান দেওয়া দলটির উদ্দেশ্য। এক যুগ বন্ধ থাকা দলীয় কার্যালয়গুলো খুলে সেখানে সভা করতে পুলিশের অনুমতি চাওয়া হবে। ইতোমধ্যে সে চেষ্টা করায় চলতি সপ্তাহে একাধিকবার পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যায়।

কুমিল্লা মহানগরের সেক্রেটারি এমদাদুল হক মামুনের বরাতে সমকাল আরো জানান, সমাবেশ আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আগামী ১৫ জুলাই কুমিল্লার টাউন হল মাঠে সমাবেশ করতে চাই। ঈদের পর পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হবে। পুলিশ যদি ১৫ জুলাইয়ের পরিবর্তে অন্য কোনো দিন সমাবেশের অনুমতি দেয়, তবে জামায়াত সেদিন সমাবেশ করবে। অনুমতি না দিলে কী হবে– প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে।

কুমিল্লার পর চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা এবং রংপুরে সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সমকালকে বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করতে মহানগর ও জেলা শাখাগুলোকে বলা হয়েছে।

জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি না দিতে আপিল বিভাগে গত মঙ্গলবার আবেদন করেছেন তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। তাঁর রিটেই ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছিল। চাঁদপুরীর আবেদনে সরকারের ইন্ধন আছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছে জামায়াত। তবে ডা. তাহের বলেছেন, নতুন আবেদনের কারণে সভা-সমাবেশে বাধানিষেধ আসার কারণ নেই। সভা-সমাবেশের সঙ্গে নিবন্ধনের সম্পর্ক নেই।

এসব সমাবেশে বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণ জানাবে না জামায়াত। বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক ২০১৮ সাল থেকে খারাপ যাচ্ছিল। গত ডিসেম্বরে দুই দলের সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিক জোট ভাঙলেও যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন তাঁরা। তবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো পর্যায়েই যোগাযোগ নেই বিএনপি-জামায়াতের।

জামায়াত সূত্রের খবর, অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের কারণে নির্বাচনের বছরে প্রকাশ্য রাজনীতি করার যে সুযোগ এসেছে, বিনা অনুমতিতে সমাবেশ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে তা নষ্ট করতে চায় না জামায়াত। ঢাকায় ৫ জুন সমাবেশ করতে চেয়েছিল দলটি। সেদিন অনুমতি না পেয়ে পাঁচ দিন পর সমাবেশ করে। আগামীতেও একই কৌশল থাকবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দলীয় নেতাদের মুক্তিসহ নানা দাবিতে জামায়াত সমাবেশের কর্মসূচি দিলেও দলটির আসল লক্ষ্য আগামী নির্বাচন। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসব সমাবেশ করতে চাইছে। এ কারণে ময়মনসিংহ, বরিশাল ও ফরিদপুর জামায়াতের সাংগঠনিক বিভাগ হলেও, সেখানে সমাবেশ করার পরিকল্পনা নেই। কারণ এসব এলাকায় ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত দুর্বল। ঢাকা বিভাগেও একই অবস্থা দলটির। কিন্তু বড় শহরগুলোর পর রাজধানীতে বিশাল সমাবেশ করে রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় জামায়াত।

দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা সমকালকে বলেন, ২০১৩ এবং ২০১৫ সালের হরতাল-অবরোধে সহিংসতার জন্য জামায়াতকে দায়ী করে দেশে-বিদেশে রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সহিংসতার মামলায় ধরপাকড় করার সুযোগও পায়। এবার সরকারকে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। হরতাল-অবরোধ নয়, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সভা-সমাবেশ করে মাঠে থাকার চেষ্টা করা হবে।

গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশে বাধাদানকারীরা দেশটির ভিসা পাবে না। জামায়াতের একজন নেতা সমকালকে বলেন, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলো যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে আগের এক দশক চেষ্টা করেও জামায়াত এ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি।

আগামী ২৩ জুলাই মার্কিন দূতাবাসের আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হবে। আগের বছরগুলোতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ করা হলেও জামায়াতকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এবার জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানসহ তিন নেতাকের আমন্ত্রণ করা হয়েছে।

জামায়াতের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ আগামীতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এতে গত ১৪ বছরে প্রথমবারের মতো সত্যিকারের চাপে পড়েছে সরকার। এ সুযোগে জামায়াত মূলধারা তথা রাজপথের রাজনীতিতে ফিরতে চায়। সব রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারলে সহিংসতার আশঙ্কা নেই। ‘বিদেশি বন্ধুরা’ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। এতে বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ তাদেরও লাভ হবে।

সরকারের সঙ্গে সমঝোতার গুঞ্জন শোনা গেলেও, জামায়াত তা শুরু থেকেই নাকচ করে আসছে। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেছেন, ঈদের পর সব দল ও জনগণকে নিয়ে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। স্পষ্ট বলতে চাই, যতদিন বেঁচে আছি স্বৈরাচারের শাসন মানব না। আওয়ামী লীগ নাটক সাজিয়ে নিজামীসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করেছে। তাদের সঙ্গে আপসের প্রশ্নই আসে না।

তবে বিএনপির সঙ্গেও জামায়াতের যোগাযোগ নেই। জামায়াতের একজন নায়েবে আমির বলেছেন, আপাতত বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ বা যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনা নেই। জামায়াত নিজের মতো সভা-সমাবেশ করবে। বিএনপি যোগাযোগ বন্ধ করেছে। সম্পর্ক ঠিক করতে হলে, বিএনপিকেই যোগাযোগ করতে হবে।

জামায়াতের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের ভাষ্য, বিএনপি যদি আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, তবেই জামায়াত তাদের সঙ্গে যাবে। আগ বাড়িয়ে কিছু করে নিজের ওপর বিপদ টেনে আনবে না। বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নামলে জামায়াতের ওপর আবার ধরপাকড় শুরু করবে সরকার।

Logo-orginal