admin
প্রকাশ: ২০২৩-০৬-০৪ ১১:২১:১৬ || আপডেট: ২০২৩-০৬-০৪ ১১:২৪:০৩
এইচ এম জাবেদ বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রামঃ উম্মুল মাদারিস খ্যাত দেশের শীর্ষ কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ইন্তেকাল করেছেন।
০২ জুন ২০২৩, ১৯ জৈষ্ঠ্য ১৪৩০ বাংলা ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৪ হিজরি জুমা’বার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ৭৮ বছর হায়াত পেলেন।
জানাজাও দাফন: শনিবার বা’দ মাগরিব মাদ্রাসা কম্পাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজতে ইসলামের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সূত্রে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, মাওলানা ইয়াহিয়া লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন। গত বুধবার (৩১ মে) তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে বৃহস্পতিবার (১ জুন) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
পেছনে ফিরে দেখাঃ ▪মাওলানা ইয়াহিয়া রহিমাহুল্লাহ্কে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম (মহাপরিচালক) করা হয় ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মাদরাসার শুরা বৈঠকে। ▪উক্ত শূরা বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে (৮ সেপ্টেম্বর ২০২১) তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন বলে জানা যায়। ▪শূরা কমিটির অন্যতম সদস্য ও নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরীর সূত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায় শুরা বৈঠকে প্রথম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মাওলানা আবদুস সালাম চাটগামীকে মাদরাসার মহাপরিচালক করা হবে। কিন্তু ঘোষণা করার আগেই বৈঠক চলাকালে তিনি ইন্তেকাল করায় শুরা কমিটির বৈঠকে মাওলানা ইয়াহিয়াকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়েছে।
একই বৈঠকে মঈনে মুহতামিম পদে মাওলানা মুফতি জসিমকে নির্বাচিত করা হয়েছে। আর হাটহাজারী মাদরাসাটির শিক্ষা পরিচালক করা হয়েছে মাওলানা কবিরকে। ▪১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন আল্লামা আহমদ শফী রহিমাহুল্লাহ্, দীর্ঘদিন পুরো কওমি অঙ্গনেই ছিল যার একচ্ছত্র প্রভাব। আল্লামা আহমদ শফী যখন মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন তখন এর সহকারী মহাপরিচালক ছিলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এরি মধ্যে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির আমির ছিলেন আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। ▪২০২০ সালের ১৭ জুন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদরাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন এবং তার স্থলে নিয়োগ দেওয়া হয় আল্লামা শেখ আহমদকে। ▪নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মাদরাসার মহাপরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন আল্লামা আহমদ শফী এবং পরদিনই তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ▪আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর হাটহাজারী মাদরাসায় পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন দৃশ্যপট সৃষ্টি হয়। তখন শুরা কমিটির এক বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মাদরাসা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে রাখা হয়- মাওলানা আবদুস সালাম চাটগামী, আল্লামা শেখ আহমেদ ও মাওলানা ইয়াহিয়াকে। তবে অদৃশ্যভাবে বাবুনগরীই মাদরাসার পরিচালনাসহ সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতেন বলে জানা যায়। যে কারণে মহাপরিচালক পদে কেউ না থাকলেও শূন্যতা অনুভব করেনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। ▪১৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ইন্তেকালে মাদরাসা পরিচালনায় আবার নতুন করে সংকট দেখা দেয়। ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ শুরা কমিটির বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মাওলানা ইয়াহিয়াকে। তিনিও গতরাতে চলে গেলেন আল্লাহর সান্নিধ্যে।