admin
প্রকাশ: ২০২০-০৭-০৩ ১১:৫৯:১১ || আপডেট: ২০২০-০৭-০৩ ১১:৫৯:১৩
কায়সার সিকদারঃ পৃথিবীতে যতসব অর্জন তারুণ্যের জয়গানে।আজকের যে শিশু আগামীতে তারুণ্য,দেশের হাল চাষকারী। কোন পৃথিবীটি রেখে যাচ্ছি এসব তারুণ্যের কাছে!?
দেশে করোনার ঝড়ে শিশু থেকে বড় বৃক্ষ, সব বয়সি উপড়ে যাচ্ছে।করোনা ঝড়ে আমিও যেকোনো সময় উপড়ে যেতে পারি। তবে তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই। কেননা আমাদের খামখেয়ালিপনা, নির্বুদ্ধিতা, হীন মানসিকতা, অদূরদর্শিতা ও মূর্খতার পরিণতি তো আমাদেরই ভোগ করতে হবে। আমরা আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠিক না করে মূর্খের মতো বিদেশি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হয়েছি। আমরা স্বাস্থ্য খাতকে অবহেলা করে এর কাঠামোগত পরিবর্তন করিনি। এ খাতের ব্যবস্থাপনার দক্ষ কাঠামোও তৈরি করিনি। সরকারি স্বাস্থ্য খাতকে যেনতেনভাবে চালু রেখেছি। আর বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনার লাগাম টেনে ধরতে পারিনি। সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা অদক্ষ ও অপেশাদার কর্মকর্তা এবং মাফিয়া চক্রের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। বলা চলে স্বাস্থ্য খাতের কোনো অভিভাবক নেই।
ভীষণ বৈষম্য অনেক দিক থেকেই এক সামাজিক ক্ষত। কেট পিকেট ও রিচার্ড উইলসন যুক্তিগ্রাহ্যভাবে দেখিয়েছেন, বৈষম্য যত বেশি, সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ততই নাজুক হয়। একই কারণে কোভিড-১৯–এ মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি উচ্চ বৈষম্য মানে নিম্নতর সামাজিক সংহতি, কম সামাজিক বিশ্বাস এবং অধিকতর রাজনৈতিক বিভেদ। এই সবকিছু মিলে সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলার সামর্থ্য ও প্রস্তুতি কমিয়ে দেয়। উচ্চ বৈষম্য মানে নিম্ন মজুরির শ্রমিকের সংখ্যাধিক্য। যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াই সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে শ্রমজীবীদের কাজ চালিয়ে যেতে হয়। বেশি বৈষম্য মানে বেশিসংখ্যক মানুষ গাদাগাদি করে বসবাসে বাধ্য হওয়া। সস্তা জনপ্রিয়তাবাদী নেতারা বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তোলেন।
বৈষম্যতা তৈরি হচ্ছে প্রতিটি পদে পদে।চিকিৎসা, শিক্ষা, সাংস্কৃতি,বলতে গেলে মৌলিক চাহিদার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে বৈষম্য। এই বৈষম্য দ্বারা তরুণদের কোন বার্তাটায় দিচ্ছি।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমরা জাতিগতভাবে এক হতে পারিনি। স্বাধীনতার স্বপক্ষ এবং বিপক্ষ বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি, যা আমাদের চিরস্থায়ী বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তৈরি করে আমলারা তাদের ফায়দা উসুল করে নিচ্ছে। আর তারা আমৃত্যু দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।
আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে গলা টিপে হত্যা করেছি। গবেষণামূলক এবং গুণগত মানের শিক্ষার বদলে মানহীন সাধারণ শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে আমরা লাখ লাখ অর্ধশিক্ষিত বেকার তৈরি করেছি। আমরা কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করেছি।মানদন্ড শিক্ষাব্যবস্থা নামে লোক দেখানো কাজে ব্যস্ত থেকেছি।
উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদের হিসাব হয় দেশী এ-ও আইনে।আগামীর তরুণরা উত্তরাধিকার ধরে রেখে যাবে এটা স্বাভাবিক। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেমন পৃথিবীতে বসবাস করবে আন্দাজ তো করা যাচ্ছে। দায়ী করবে না তো, আমরা যেভাবে আমাদের প্রবীনদের করি।চিন্তার জগৎ বিশাল!
আশা রাখি আগামীর তরুণরা বদলে দিবে বিশ্ব,বদলে দিবে দেশের অরাজকতা। নবীনরা, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই সব মন্দ জিনিস, তারা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করে নতুন পৃথিবী তৈরি করে নিবে। ভালো যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা যেন তারা গ্রহণ করে। আশা করি এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি তরুণেরা ফিরিয়ে আনবে যাতে মেধাবীরা রাজনীতিতে আসে।