admin
প্রকাশ: ২০১৮-০৮-১৩ ০১:২৬:২২ || আপডেট: ২০১৮-০৮-১৩ ০১:২৬:২২
(ছবি, বাবা- মেয়ে) চলতি বছরের ১২ জুন রাত পৌনে ১০টা। রাজধানীর নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে একটি নোয়া মাইক্রোবাসে এক যুবককে তুলে নিয়ে বেদম মারধর করা হচ্ছিল। ওই যুবক ভেতর থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিল। পথচারীরা বিষয়টি টের পেয়ে গাড়িটি আটকান।
প্রতিবেদন দৈনিক সমকালের।
এ সময় ওই সড়ক হয়ে সাধারণ পোশাকে বালিশ কিনে বাসায় ফিরছিলেন নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই ওবায়দুর রহমান। তিনি মোটরসাইকেল থেকে নেমে মাইক্রোবাসে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চান। তারা বলেন, ‘সবাই নরসিংদীর ডিবি পুলিশের সদস্য।’ পরে ডিবি পুলিশের পরিচয়পত্র ও তরুণকে গ্রেফতারের ওয়ারেন্ট দেখতে চাইলে তারা দেখাতে ব্যর্থ হন। এতে ওবায়দুরের সন্দেহ বাড়ে।
তিনি ধরে নেন, তারা কোনোভাবেই ডিবি পুলিশের সদস্য নন। তাৎক্ষণিকভাবে উৎসুক জনতাকে মাইক্রোবাসে থাকা লোকজনকে আটকাতে অনুরোধ করেন ওবায়দুর। এর পরই হাতেনাতে তিনজনকে ধরা হয়। অন্যরা পালিয়ে যান। ওই রাতেই তাদের থানায় নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে- মূলত মারধরের শিকার সৈকত পাল (২৯) নামে ওই যুবককে তারা অপহরণ করতে এসেছেন। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে সৈকত চলতি বছরের ২৪ মে বিয়ে করেন নরসিংদীর পশ্চিম কান্দাপাড়ার বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুরেশ সরিষার তেল কোম্পানির কর্ণধার সুধীর চন্দ্র সাহার মেয়ে লিমা রানী সাহাকে (২২)।
হিন্দু ধর্মমতে ‘সাহা’ এবং ‘পাল’-এর মধ্যে তেমন পার্থক্য না থাকলেও কোনোভাবে এ বিয়ে মেনে নিতে পারছিলেন না সুধীর সাহা। এখানে লড়াইটা আভিজাত্যের। কারণ দুই পরিবারের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবধান অনেক। তাই নরসিংদী শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল ভূঁইয়াসহ ৯ জনকে ভাড়া করে ফাঁদ পেতে সৈকতকে অপহরণ করতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। অপহরণের সময় পথচারীদের সহায়তায় সোহেলসহ তিনজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করার পর এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সুধীর সাহার নাম উঠে আসে। বর্তমানে সুধীর কারাগারে রয়েছেন। পুলিশ এরই মধ্যে সৈকতকে অপহরণের ঘটনায় করা মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা জামিনে রয়েছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে বর্ণ ও জাত প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রেমের এক অনন্য লড়াইয়ের গল্প।
যেভাবে ঘটনার শুরু :জানা যায়, ২০১০ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজে পড়ার সময় সৈকত পালের সঙ্গে পরিচয় হয় লিমা সাহার। ওই বছরই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। দু’জনের বাড়িও নরসিংদী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সৈকত ২০১৫ সালে ওই কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে প্রথম বিভাগ অর্জনের পর বর্তমানে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং পড়ছেন। আর ২০১৬ সালে লিমা একই কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন। ওই বছরই নারায়ণগঞ্জের এক যুবকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে লিমার বিয়ে ঠিক করা হয়। আর তখনই বেঁকে বসেন লিমা। তিনি পরিবারকে জানিয়ে দেন- তার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সৈকতের প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ে করতে হলে তাকেই করবেন। শেষ পর্যন্ত পারিবারিকভাবে আয়োজন করা লিমার বিয়ে ভেঙে যায়।
এর পরই লিমাকে কার্যত তাদের বাসায় গৃহবন্দি করে রাখে পরিবারের সদস্যরা। যতদিন সৈকতের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন না হবে, ততদিন বাসার বাইরে বের হতে দেওয়া হবে না জানিয়ে দেন সুধীর সাহা। প্রায় দুই বছর গৃহবন্দি থাকার পর চলতি বছরের ২৩ মে লিমাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান সুধীর সাহা। বিমানবন্দরে লিমার সঙ্গে পূর্বপরিচিত সৈকতের ভগ্নিপতি শুল্ক্ক বিভাগে কর্মরত বিজয় রায়ের দেখা হয়। সেখানে লিমা তাকে জানান, জোরপূর্বক তাকে বিয়ে দিতে কলকাতায় নেওয়া হচ্ছে। তাকে বাঁচানোর আকুতি জানান তিনি। পরে পুলিশের সহায়তায় লিমাকে বিমানে তোলা হয়। তবে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই লিমা বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সোজা চলে যান সেখানকার পুলিশ সদস্যদের কাছে। তাদের জানান, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও তার বাবা জোরপূর্বক তাকে কলকাতায় নিয়ে এসেছেন। তিনি নিজ দেশে ফিরতে চান।
এরপর পরদিন কলকাতা পুলিশ লিমার বাবার সঙ্গে তাকে বিমানে ঢাকায় ফেরত পাঠিয়ে দেয়। ঢাকায় ফিরে এসে লিমা আবারও তার বাবা ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরে এসে সৈকতকে ফোন করেন। সৈকত তাকে জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার বোনের বাসায় অবস্থান করছেন। তখন লিমা সৈকতের সঙ্গে দেখা করতে নিউমার্কেট এলাকায় আসেন। এ সময় সৈকতকে লিমা বলেন, ‘হয় আজ আমাকে বিয়ে করবে নতুবা গাড়ির নিচে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করব।’ এর পরই ওই দিনই তারা পুরান ঢাকার মহাবীর মন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে করেন। একই সঙ্গে ওই দিন কোর্ট ম্যারিজও সম্পন্ন করেন তারা। সন্ধ্যায় লিমার মা লক্ষ্মী রানী সাহা ফোন করে সৈকতের কাছে লিমার কথা জানতে চান। সৈকত তাকে জানান, তারা এরই মধ্যে বিয়ে করেছেন। কিছু সময় পর লিমার মা সৈকতকে আবার ফোন করে আপাতত লিমাকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলেন। পরে সামাজিকভাবে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাকে তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
তিনি এও জানান, ইমিগ্রেশনের কাগজপত্রে সই না করেই লিমা সেখান থেকে পালিয়েছে। যাতে তাকে দ্রুত শাহজালালের ইমিগ্রেশন বিভাগে হাজির করা হয়। পরে লক্ষ্মী রানীর কথায় আস্থা রেখে লিমাকে শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে নিয়ে যান সৈকত। সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই করে বিমানবন্দর থানা পুলিশের উপস্থিতিতে জিম্মার লিখিত কপি জমা দিয়ে মেয়েকে নিয়ে যান সুধীর সাহা। লিমাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের তার আত্মীয়ের বাসায় রাখা হয়। প্রথম ২-৩ দিন লিমাকে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হতো। সর্বশেষ ২৭ মে রাত ১০টার দিকে সৈকতকে ফোন করে লিমা জানান, ‘মানসিক রোগী’ সাজিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে তাকে কোথায় তুলে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন চলছে। ৩০ সেকেন্ডের মতো কথা বলার পর থেকে সৈকত লিমার ফোন বন্ধ পায়। পরে সৈকত খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার স্ত্রীকে মানসিক ভারসাম্যহীন সাজিয়ে গুলশান-১-এর বীকন পয়েন্ট লিমিটেড নামে একটি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে ভর্তি করিয়েছেন সুধীর সাহা। ওই বীকন সেন্টারে কর্মরত একজন স্টাফ গোপনে ফোন করে সৈকতকে জানিয়ে দেন, মানসিক সমস্যা না থাকলেও লিমাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে। লিমা সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক। পরে সৈকত বীকন সেন্টারে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই লিমাকে তার হাতে তুলে দিতে রাজি হয়নি।
বীকন পয়েন্ট লিমিটেডের চিকিৎসক ডা. নুরুল হক বলেন, সুধীর সাহা আমাদের জানান, তার মেয়ে পরিবারের সদস্যদের কথা শুনছে না। স্বাভাবিক বাস্তবতায় মা-বাবার প্রতি সন্তানের এ ধরনের আচরণ অস্বাভাবিক বলেই মনে হয়। ওই মেয়ের বাবা এও জানান, তার মেয়ে জাতপাত না মেনেই সৈকত নামের এক যুবককে বিয়ে করেছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে এ বিয়ে মোটেও মানানসই নয়। এক প্রশ্নের জবাবে ওই চিকিৎসক বলেন, পরিবারের সদস্যরা যেভাবে বলেন, আমরা রোগীর রোগের ইতিহাস সেভাবেই জানতে পারি।
যেভাবে উদ্ধার :পরে আদালতে ১০০ ধারায় মামলা করে সৈকত দাবি করেন, তার স্ত্রীকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যেন দ্রুত তার স্ত্রীকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। আদালতের আদেশে গুলশান থানা পুলিশ চলতি বছরের ২৭ জুলাই বীকন থেকে লিমাকে উদ্ধার করে। এরই মধ্যে লিমার বাবা সুধীর সাহা হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, অবৈধভাবে লিমাকে উদ্ধার করা হয়েছে। মেয়েকে যেন দ্রুত তার হেফাজতে দেওয়া হয়, তিনি সেই আবেদন করেন।
এ ব্যাপারে সৈকতের আইনজীবী ব্যারিস্টার দীপঙ্কর ঘোষ জানান, আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের আদেশে লিমাকে বীকন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে সুধীর সাহার পক্ষে হাইকোর্টে রিটে বলা হয়, লিমাকে অবৈধভাবে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরে আদালতকে বিষয়টি অবহিত করার পর সুধীরের রিট আবেদনকারীকে ব্যাখ্যা দিতে আজ রোববার হাজির হতে বলা হয়েছে। মেয়েটি তার স্বামীর কাছে যেতে চান। কিন্তু তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন সাজিয়ে নাজেহাল করছে পরিবার। আদালতের নির্দেশে লিমা বর্তমানে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছেন। এ মামলায় আজ রোববার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
সৈকত পাল সমকালকে জানান, বর্ণ-গোত্র প্রথার কারণেই তার সঙ্গে লিমার বিয়েতে আপত্তি তার পরিবারের। তবে লিমা শুরু থেকেই অনড় থাকায় তার পরিবার ষড়যন্ত্র শুরু করে। জাত ও বর্ণ প্রথায় কঠোর বিশ্বাসের কারণে লিমার বাবা তাদের বিয়ে মেনে নিচ্ছেন না। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এটা চলতে পারে না। তিনি আরও জানান, অপহরণ চেষ্টার সময় মাইক্রোবাসের ভেতর সোহেল বলছিলেন- ‘তোর জন্য কোটি টাকার মিশনে নেমেছি। ৫০ লাখের চুক্তি হয়েছে। এখন তোকে তুলে নিতে পারলে খুশি হয়ে সুধীর বাবু আরও ৫০ লাখ দেবে। তোকে ডিভোর্স পেপারে সই করতে হবে। নইলে রক্ষা নেই।’
সৈকতের মা নরসিংদী পূজা উদযাপন কমিটির মহিলা সম্পাদিকা ইতি পাল বলেন, সুধীর সাহার লোকজন তাদের নরসিংদীর বাড়ির গেট ভাংচুর করেছে। তাদের বাড়িতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে গেছে। ভয় ও আতঙ্কে এখন তারা নরসিংদীর বাড়ি তালাবদ্ধ করে ঢাকায় মেয়ের বাসায় উঠেছেন। পুলিশের পাহারায় আদালতে হাজির হতে হয়। তাদের শঙ্কা, যে কোনো সময় তাদের পরিবারের কাউকে হত্যার ছক করতে পারে সুধীর সাহা।
সৈকতের মা আরও জানান, তারা মধ্যবিত্ত পরিবার। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে এক মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক। আরেক মেয়ে সিটি কলেজে পড়ছে। স্বামী একটি সাবান ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। লেখাপড়াই তাদের পরিবারের সম্পদ। সুধীর সাহা টাকার জোরে প্রেম ও মানবতা কেড়ে নিতে চান।
অপহরণ ও হত্যা মিশনে যারা :মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, লিমাকে বিয়ে করার পর সৈকতকে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন সুধীর সাহা। তিনি ভাড়া করেন নরসিংদী শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল ভূঁইয়া, জুয়েল মৃধা, সোহাগ, অনিক দাস বাপ্পী, সৈকত সাহা বিল্টনসহ অন্তত ৯ জনকে। এরই মধ্যে সোহেল, সোহাগ, জুয়েল ও সৈকতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে সৈকত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, সৈকত পাল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। লিমার সঙ্গে সৈকতের বিয়ের বিষয়টি জানার পর সুধীর সাহা তার কাছে যান।
এরপর সুধীর তার সহকারী নাজিরের মাধ্যমে সৈকতকে যুবলীগ নেতা সোহেল ভূঁইয়ার অফিসে ডেকে নেন। তখন সোহেল জানান, সুধীর বাবুর আদেশ, সৈকতকে লাগবে। তখন সৈকত পাল ফোন করেন তার বন্ধু অনিক দাস বাপ্পীকে। বাপ্পী সেখানে পৌঁছালে সোহেল বলেন, ‘সৈকত পাল তোমাদের বন্ধু। তাকে আমরা চাই।’ সেখানে পরিকল্পনা হয় মোবাইল কেনার কথা বলে অনিক ফোন করবেন সৈকত পালকে। এও বলা হয়, ফোন কিনতে মোতালিব প্লাজার কথা বলা হবে। প্রথমে ওই পরিকল্পনায় বন্ধুকে ফাঁসাতে রাজি হননি অনিক। পরে সোহেল তাকে গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখান। এর পরই বাধ্য হয়ে সৈকত পালকে ফোন করে নিউমার্কেট এলাকায় আসতে বলেন অনিক। পরে সেখান থেকে তাদের মোতালিব প্লাজায় যাওয়ার কথা ছিল। বন্ধুর কথায় সাড়া দিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় এলে সৈকত পালকে নোয়া গাড়িতে তুলে বেদম মারধর করেন সোহেলসহ অন্যরা। পরে সৈকতের চিৎকার-চেঁচামেচি ও পুলিশের এএসআই ওবায়দুরের দৃঢ়তায় ধরা পড়েন সোহেলসহ তিনজন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে সৈকত পালকে অপহরণের চেষ্টা চলছিল। এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর নেপথ্যের আসল কাহিনী উঠে আসে। নির্ভয়ে এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, অপহরণের মূল নির্দেশদাতা সুধীর সাহা। সোহেলসহ দাগি আসামিদের তিনি ভাড়া করেন। সোহেলের বিরুদ্ধে এর আগেও অপহরণ করে হত্যাচেষ্টার মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। অপহরণে সফল হলে সৈকত পালকে তারা প্রাণে মেরে ফেলত। এখনও বাদীপক্ষকে প্রয়োজনে পুলিশি পাহারা দেওয়া হচ্ছে।
অপহরণকারীদের হাতেনাতে ধরা সেই এএসআই ওবায়দুর রহমান বলেন, হঠাৎ দেখি কয়েকজন মিলে নিউমার্কেট এলাকায় মাইক্রোবাসের ভেতরে একজন যুবককে মারধর করছে। ওই যুবক ভেতর থেকে চিৎকার করছেন আর বলছেন, ‘আমাকে ওরা প্রাণে মেরে ফেলবে।’ বাঁচার আকুতি জানান তিনি। এর পরই আশপাশের লোকজনের সহায়তায় অপহরণকারী তিনজনকে ধরা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার দক্ষিণের ‘ঘ’ অঞ্চলের হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার কমল মজুমদার জানান, সৈকত পাল ও লিমা সাহার বিয়ের রেজিস্ট্রি করেছেন তিনি। হিন্দু রীতি অনুযায়ী পাল ও সাহা পরিবারের মধ্যে বিবাহ হতে কোনো বাধা নেই। এমনকি দেশের আইনেও এটা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা অনেকের মানসিকতার। তবে প্রায়ই হিন্দুদের মধ্যে আলাদা আলাদা জাতপাতের ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়। পাত্র-পাত্রী প্রাপ্তবয়স্ক কি-না সেটাই মুখ্য।
এ ঘটনায় সুধীর সাহা জেলে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তার স্ত্রী লক্ষ্মী রানীকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।